Header Ads

Header ADS

বিবেকের জোয়ার



ডি. সি. হিলে যে নার্সারিগুলো আছে, মালিক এবং কর্মী-লোকেরা সেগুলোর প্রচুর যত্ন নেয়। সার, পানিসহ আর যা যা মাল-মেটেরিয়াল দরকার তার সবের যোগান দেয়। এমন যত্ন নেয়, যেন মরে যাওয়া গাছটিতেও ফুল ফোটতে বাধ্য। কিন্তু ডি. সি. হিলের প্রতিরক্ষক হিসেবে যে দেয়ালটি তার চারপাশে দণ্ডায়মান, নার্সারি কর্তৃপক্ষ ওটার যত্নের ধার ধারে না, একফোঁটা পানিও তারা ওটাতে দেয় না। গ্রীষ্ম-রোদে দগ্ধ, শীতের রাতে কম্পিত এই দেয়ালটি পরে থাকে পরম অবহেলায়। সূর্যদিনে একটু পানি পেলাই তা পানের জন্য পিপাসিত দেয়ালটি তার প্রতিবেশীর সাথে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। এ যেন দেয়ালের খরা।
কিন্তু মানবতা এখনো এদেশ থেকে উৎখাত হয়ে যায়নি। বিবেকবান মানুষেরা এখনো কবরে জায়গা দখল করেনি। জীবের কল্যাণে, জড়ের কল্যাণে এসব মানুষ জীবনকে সপে দিয়েছে অকাতরে। যেখানে সৃষ্টির অসুখ, সেখানেই তাদের সুখমাখা হাতের হাতছানি। শর্ত, স্বার্থ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে তারা প্রকৃতির সেবায়, মনবতার আরাধনায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে হরদম।
এমনই একদল মহানুভব মানুষ জড় দেয়ালে ফুল ফোটাবে বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা মানতেই পারে না এই নির্বাক দেয়ালের উপর সূর্য কিংবা শীতের অত্যাচার। সুতরাং তাদের বিবেক-প্লাবিত শরীরে একবিন্দু জল থাকতে এ হতে দেয়া যায় না, কোনোভাবেই না। তাই তারা নিরীহ দেয়ালের সাথে এক নিঃস্বার্থ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে যে তারা প্রত্যেকেই তাদের অন্তঃনদীর বাঁধ দেয়ালের জন্য উন্মুক্ত করে দিবে। নির্বাক দেয়ালের নিরবতাই যে সম্মতি এটা আমাদের বিবেকবান সমাজের বুঝতে একটুও দেরি হল না। তদুপরি, ইতঃপূর্বে ‘দেয়াল-কুকুর’ চুক্তি তাদের বিবেককে প্রচুরভাবে আন্দোলিত করেছিল কারণ কুকুর ইরেশনাল বিং হয়ে যদি দেয়ালের দুঃখ বুঝতে পারে, তাহলে তারা আপাদমস্তক রেশনালিটি নিয়ে কি করছে!? আর নারীরা যেহেতু জন্মসূত্রে এ কর্মে অক্ষম, তাই এটা তাদের সীমাহীন পুরুষত্বের পরিচায়কও বটে। সব বিবেচনা করে দলে দলে তারা ‘মানব-দেয়াল’ চুক্তির সার্থকতায় লিপ্ত হয়েছে।
সাধারণ পানিতে অনেক প্রকার জীবাণু থাকতে পারে, যা হয়ত দেয়ালের জন্য ক্ষতিকর। তাই তারা বিশুদ্ধ পানির যোগানের জন্য ব্যবহার করে মানব-যন্ত্র। আর মানব-যন্ত্রে পরিশোধনের মাধ্যমে এই অমিয় জল তৃষিত দেয়ালে সরবরাহ করা হয় অত্যাধুনিক চর্মকলের মাধ্যমে এবং এই যন্ত্র দেয়ালের প্রশান্তির কথা বিবেচনা করে শীতে ধোঁয়াযুক্ত এবং গরমে সহনীয় পানি সরবরাহ করে।
এভাবে প্রতিদিন শত শত হিতৈষী কর্মীগণ তাদের মানব-যন্ত্রের মাধ্যমে দেয়ালের খরা নিবারণের এক পুণ্যবান কাজে যোগ দিয়েছে, দিচ্ছে। আর এভাবেই তারা মৃত দেয়ালে অজস্র বিমূর্ত ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়েছে, যার ঘ্রাণ ডি. সি. হিলের মূর্ত ফুলের ঘ্রাণকে ছাড়িয়ে আমার, আপনার, আমাদের নাকে মেশকে-আম্বর রূপে জায়গা করে নিয়েছে।
কয়েকজন বিবেকবান(শিক্ষিত) কর্মীদের কষ্টসাধ্য এই কারবার দেখে আমি ব্যথিত হলাম যে মানুষ দেয়ালের জন্য এত কষ্ট করতে পারে!! তারপর বুঝলাম, মানুষ শুধুমাত্র মানুষের জন্য নয়, জড়ের জন্যও বটে। থাকতে পারলাম না আর সেখানে। চেরাগি পাহাড়ে এসে একটা ফুলের দোকানের সামনে এসে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছি। দোকানী জিজ্ঞেস করে, "ভাই, কি ফুল লাগবে?" আমি বলি, "ঘ্রাণ লাগবে ভাই। এটার জন্য দাম দিতে হবে?" ও হাসে, আমিও হাসি কিন্তু ও জানে না আমার মেশকে-আম্বর বিধ্বস্ত নাকের কাহিনী।
অসাধারণ আমাদের মানুষ এবং মানুষের বিবেক।

No comments

“The Ancient Mariner” is a simple allegory of guilt and regeneration.

Topic: The Ancient Mariner Author: Samuel Taylor Coleridge Type of Work: Poem Discussion Category: Broad Question In this segment,...

Powered by Blogger.