Header Ads

Header ADS

সংক্রমিত মন


গোধূলির সবটুকু লাল দিয়ে যেন কহনের চোখের পরিমণ্ডল সজ্জিত কারণ মনের আন্দোলিত কথাগুলো বহুদিন পর আজ তার অভ্যন্তরে অগ্নিরূপে ভালোই প্রজ্বলিত হয়েছে। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে এলিসার সাথে ২বছর আগে বন্ধুত্বের বিন্দু বিন্দু জলে যে নদীটি সে নির্মাণ করেছে তা যেন ফুলে ফেঁপে ধানসিঁড়ি হয়ে ওই প্রেম সাগরের দিকেই প্রবাহিত হতে চলেছে। এলিসার উনানেও যে ঠিক একই তালে প্রেমের পারদ জেগে একাকার। তবে কহনের সংসর্গে এলিসার মনে ভালোলাগার শতভাগ প্লবন সৃষ্টি হলেও তার অভিবেক্তিতে এতটুকু গুড়িবৃষ্টিও কহন আঁচ করতে পারে না কারণ পুরুষের তুলনায় নারী যে গহীন ওই মারিয়ানা ট্র্যান্সেরই প্রাণী, তাই সে এলিসার মনের প্রবাহমানতা মাপতে ক্ষণে ক্ষণে পরাস্ত।
এতদিন ধরে কহন এলিসার কানে অনেক বাকপটুতার ঝড় তুলেছে, ঝড়ের মাঝে ভালোবাসার তুঙ্গী বাতাসের পরিমাণই ছিল বেশি। এলিসাও যে তার আবেশ পাচ্ছে- দেখাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আবেগতাড়িত হয়ে বেসামাল কয়েক শব্দ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলেও চেতনায় আসতেই নারী কয়েকগুণ বক্রবাক্যের বারুদে তা সুদে-আসলে বিয়োজন ঘটাতে মুহূর্তও দেরি করে না। তাই কহন যতবারই এলিসার মনের চৌকাঠ অতিক্রম করে অন্দরে প্রবেশ করতে চায়, প্রতিবারই হোঁচট খেয়ে নিরন্তর এক রাত্রিকে আলিঙ্গন করে। অপরদিকে এলিসার মনেও কয়েকদিন ধরে কোন এক মর্মভেদী প্রসঙ্গে দুঃখের বরফ শৈল জমতে জমতে গিরি আকার ধারণ করেছে; তাই বলে তার কর্ণে কহনের স্বরের হেডফোনটা লাগিয়ে রাখেনি তা বলা যাবে না- মাঝে মাঝে শূন্য থেকে কহনের কণ্ঠে তার নামটি অনুরণিত হতে শুনে; চোখ খুলে দেখে কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। নিদারুন আসহায় সে এবং মনটা তার ক্ষণে ক্ষণে নিম তিতা। রাতের বিছানার হালকা বালিশটি তার সকাল হতেই চক্ষু-আপ্লাবে ওজনে দিগুণ হয়। কহনের আবেগের তালে তাল মিলিয়ে অসীম আবেগে প্রেমসমুদ্রে পতনের ইচ্ছা তারও টলমল; ইচ্ছে করে কহনের প্রতিটি নির্ঘুম রাতের দ্বান্দ্বিক চিন্তাকে নিমিষেই নিঃশেষ করে দিতে। কিন্তু এই প্রাণবন্ত অনুভূতিগুলো তার ওই হৃদকারাগারেই; কিছুতেই সে কহনকে বুঝতে দেয় না তার বন্দিশালার অবেক্ত আখ্যানগুলো।
কিন্তু আজ কহন তার ঠাসা মনটাকে আর তিতাতে চাচ্ছে না। রাতের মাথা খেয়ে সে এটাই আবিষ্কার করল যে চলতে পথে সে কত নারীর সাথেই তো কথা বলে, কই মাথা থকে কথাগুলো জিহ্বা দিয়ে বিস্ফোরিত হতে একটুও ত আটকে না। সেরকমই কোন অচেনা ললনা ভেবে লালিত ভালোবাসার কথাটি আজ এলিসাকে ওগরিয়েই ছাড়বে। সে প্রভাত ফাটার জন্য মুখিয়ে অপেক্ষা করছে। মিনিটে মিনিটে আত্মবিশ্বাসের মাত্রা কমছে আর বাড়ছে, কিন্তু সে আজ বদ্ধপরিকর। হাজারো রাতকে সে চোখের সামনে আলোকে বিলীন হতে দেখেছে। এলিসার তাড়নায় সে বস্তা বস্তা মহাকাব্য রচনা করেছে আর দাহ্য করেছে- একটিও এলিসার হাতে পৌঁছায়না। এলিসার সম্মোহনও সে চর্মচোখে আন্দাজ করতে পারে না। সহ্যের বাঁধ তার ছিড়তে ছিড়তে আজ পৌঁছেছে পূর্ণতায়। ভোর হতেই সে এলিসার ফোনে ঘণ্টা বাজায় এবং তার প্রিয় রঙ লালের কোন এক শাড়ি পরে তাকে চকবাজার আসতে বলে। এলিসার পক্ষ থেকেও আসতে না পারার কোন অজুহাত আঁচ করা যায়নি কারণ সেইও তো রাতে বসে বসে অনেক অঙ্কই কষেছে কিন্তু কহনের সাথে পাটিগণিতের পাতায় পাতায় অসঙ্গায়িত মানটা তার কেছে অসহ্য। তাই এটাই স্থির করল যে নিজেরই মানতে কষ্ট হচ্ছে এমনই একটা সিদ্ধান্তের অবতারণা করতে যাচ্ছে সে আজ কহনকে।
কহন নিজেকে আজ লাল পাঞ্জাবীতে ভরেছে; নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে সে আত্মবিশ্বাসকে রক্তপ্রবাহে মিশানোর চেষ্টা করছে। এলিসাও আজ কিছুটা ভীত আর কিছুটা পুলকিত এবং নিজেকে সে লালের পরশে সাজিয়েছে ভিন্ন মাত্রায়, ঢের কালো পাপড়ির মাঝে হালকা বাদামী চক্ষুদ্বয় সে আশ্চর্যজনক মায়ায় জ্বলজ্বল। ফাগুনের ছোঁয়া যেন প্রকৃতি হয়ে তার মাথা বেয়ে শাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। আজকের প্রভাতের প্রতিটি মাতাল মৌন পবন তাদের দুজনকেই দুলিয়ে যাচ্ছে। শীতের প্রায় শেষ ভাগ- এখনও বিদায় নেয়নি, তাই আবছা কুয়াশা ঘেরা শহরের প্রকৃতি। ঠাণ্ডাটা সহনীয়, এমনই এক প্রভাতে দুজনই পা বাড়ায় রাজপথ রাঙ্গাবে বলে। উভয়ের মাঝে ভাবের আন্দোলন চলমান। কহনের গাত্রকম্পে রিক্টার স্কেল নড়বড়- মাত্রা নির্ধারণ প্রায় অসম্ভব। অবশেষে কহন রিক্সা করে গোলজারের পদপ্রান্তে এসে হাজির হয়। দোকানপাটে বড় বড় তালা ঝুলছে। চট্টশ্বরী থেকে আসা রাস্তাটির পিচঢালায়ের উপর সে বারবার উকি মারে কারণ রমণী যে ওই পথ ধরেই আসবে। নিঃশ্বাসের গতিও তার সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে। অস্থিরতা তাকে বিষিয়ে তোলাই সবকিছুই কেমন হুটহাট। কোন বিশেষ নৈবেদ্য সে নিয়ে আসেনি, কিন্তু যখন থেকে এলিসার প্রতি তার ভালোবাসা শাখা-প্রশাখা গজাতে শুরু করে সেই থেকেই সে একটা রিং তার আঙ্গুলে পরাবে বলে কিনে রাখে। ওটাই সে পকেটে গুঁজে নিয়ে আসে। জয়নগরের কাছে এসে এলিসা তার রিক্সা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে। সবকিছুতেই স্বতঃস্ফূর্ত, চঞ্চল মেয়েটির শরীরটা যেন মাড়িয়ে আসছে, হাঁটাতেও তেমন গতি নেই। কহন আবার পিচঢালায়ে চোখ সরাতেই তার গহীন দৃষ্টি নারীর পায়ে নিক্ষেপ্ত হয়। এলিসার সৌন্দর্যে অভিভূত কহন প্রকৃতিকে মিনতি করে বলে, ‘এই নিশ্চুপ প্রভাতে অঙ্গনা আমার আহ্বানেই তার নূপুরগুঞ্জনে গুঞ্জনরত পা রাজপথ ছুঁয়েছে বলে তুমি আমায় ঈর্ষা করো না। সৌন্দর্যে সে তোমার দ্বান্দ্বিক নয়; পার্থক্য হল সময়ের সাথে তোমার রূপে আসে পরিবর্তন, কিন্তু আমি তার এই রূপটাই আজীবন দেখতে চাই, তুমি অপরাধ নিও না।‘ এলিসার কোমল পদের ধীর অগ্রগামিতা যেন কহনের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ঢুকে তীব্র আবেগে বাঁশির সুর তুলছে; নারীর প্রতিটি বাকে বাকেই যে পুরুষের হিড়হিড় দৃষ্টি চেতনা খুঁজে পায়। তার অমন গতিও জানান দিচ্ছে যে, সেও চায় সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির সংস্পর্শে তার তিগ্ম মনটা একটু হাসুক; মনের অসাড়তা তাকে হাসতে দিচ্ছে না, সৌর-দিপ্তী দেখতে দিচ্ছে না সে বহু দিন ধরে। সে জানে তার কোন কোন জিনিসে কহনের শৈথিল্য বেশি, আর সে সেই সব মণ্ডলে সাজের আভা ছিটিয়েছে একটু বেশিই; সে যে মোহিত কহনের সম্মুখে উন্মীলিত এক অনাঘ্রাত পুষ্প। কহন তার হৃদয়ের বৃহৎ অংশজুড়ে এলিসার সাড়া অনুভব করে। আর তাই তার দৃষ্টি পরিক্রমার ইতি ঘটেছে মাত্র ওই লাল অবধি গিয়েই- অপার নভোমণ্ডল আজ তার চোখে পড়ে না, এত অপরূপ নিসর্গও যে এলিসার সামনে ফিকে মনে হচ্ছে। বাস্তবতার রাজ্য থেকে সে অন্তত আজকের দিনটার জন্য ইস্তফা নিয়েছে; ২বছরের লালিত ভাবধারা থকে যেন সে মুক্তধারায় নাম লিখিয়েছে এবং এলিসার সংমিশ্রণে রচনা করতে চায় নতুন এক কণ্ডিফর্ম ম্যাপ।
যত্তসব আউলা-ঝাওলা চিন্তা ভাবনা কহনের মাথাকে রূপকথার একদম গভীরে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এলিসা তার সামনে হাজির কিন্তু অত্যাসক্ত পদার্থের কোন হুঁশ নাই তাতে। এলিসা তার চোখে চোখ রাখে; হুঁশে আসতেই সে থতমত খেয়ে এক হাট্টাগাট্টা বীরপুরুষ। বন্ধু কহনকে এলিসা খুঁজে, কিন্তু এ কে? এর চলন বলন কিছুই ত কহনের সাথে মিলছে না- পুরাই এক অজ্ঞাত মানব। ২বছর যাবত সে কহনকে দেখে আসছে, এমন পরিবর্তিত কহন সে এর আগে আর কখনও প্রত্যক্ষ করেনি। কহন কিছুই বলে না; ওপারে একটা রিক্সা দেখতেই সে হাত বাড়ায় এবং এটাকেই সারাদিনের জন্য ভাড়া করে। সে রিক্সায় উঠে এলিসার দিকে হাত বাড়ায়; যখনই এলিসা হাতটি ধরে তার দিকে তাকায়, সে কহনের চোখে কি অমিশ্র মায়া অনুভব করে যেন এই নেত্র অনেকগুলো ভাব প্রকাশ করতে চেয়েও কেমন মূক হয়ে আছে। তাই এলিসার অভিমানের ঝাটিকা তুলতে যেয়েও স্তব্ধ হয়ে যায়। সে বন্ধুত্বের অধিকারে কিছুটা বন্ধুতুল্য ভাব প্রদর্শন করে, মজার ছলে পরিস্থিতি স্বাভাবিকতায় আনয়নের চেষ্টা চালায়, কিন্তু কহন তা পরম আবহেলায় অগ্রাহ্য করে। তাকে আজ যে রচনাই দেয়া হোক, সে লিখবে ওই প্রেম রচনাই। সে আজ নিষ্কলম বিজ্ঞ এক দার্শনিক। তাই কোন কথাই সে আজ বলে না; দুচারটা যা বলে তাতে দর্শনের লবণ ছিটায়। এলিসার পক্ষে কহনের এমন আরোহাত্মক উল্লম্ফন উধঘাটন কিছুটা দুষ্কর, যতভাগ বুঝে তাতে তার দক্ষতা মিশ্রিত অভিবেক্তি শতভাগ বুঝার ইঙ্গিত দেয়।
আনেক পথ পাড়ি দেয়ার পর রিক্সাওয়ালা ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। দার্শনিক তা বুঝে সামনের ফয়েজ লেকে যেয়ে থামে এবং রিক্সাওয়ালাকে কিছু টাকা দিয়ে ভেতরে যায়। পুরা পার্কটা তারা ধীর গতিতে জিহ্বাশূন্য ঘুরে। আবশেষে লেকের পাড়ে যেখানে পাহাড় পা ভেঝাচ্ছে তার খানিকটা উপরে তারা বসে পড়ে। কহন লেকে একের পর এক ঢিল ছোড়েই চলেছে। এলিসা তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকায়, আবার জলের দিকে তাকায়; তাকিয়ে বলে, ‘দেখ কিভাবে পানির ঢেওগুলো বিন্দু থেকে পাড় পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে, ঢিলের কর্তা কি রাখে এ খবর?’ কহনও আস্তে আস্তে তার ভাষ্যে প্রেমদর্শনের মাল-মেটেরিয়াল যোজন করে বলে, ‘আমার এই হৃদয়টাতেও, দেখ এইখানটিতে, কারো নিক্ষিপ্ত ঢিল অহোরাত্র অনুভব করছি, যার কম্পন আমার এই চর্ম-কায়টা অতিক্রম করে কারো দৃষ্টির সীমানা পর্যন্ত থ-র-থ-র, কেউ কি তা দেখেও অগ্রাহ্য করছে না?’ এলিসা কহনের রচনার এই ভাবটা শতভাগ বুঝে, কিন্তু মনহাসি মেরে মাথা নাড়ায়, ‘বুঝলাম না?‘ ব্যর্থ দার্শনিক বুঝানোর মন মানসিকতা ছেড়ে ঢিল ছোড়ায় মন দেয়, লেককে সমতল বানানোর ইচ্ছা তার নাই- কাউকে মানানোর চিত্তবৃত্তি আজ তার প্রখর। যখন থেকে সে এলিসাকে দেখছে, সে তখন থেকেই তার হৃদবৈশাখী এক সেকেন্ডের জন্যও থামেনি; এখনও ভোলেনি পিচঢালায়ে এলিসার সোনালি চরণের পদচারণা। ভাবতেই সে চিৎকার করে করে বলতে চায়, ‘এলিসা! এই আমিই যে তোমার প্রণয়াকাঙ্ক্ষী, ভালোবাসার প্রতিটি পবিত্র বর্ণে তোমার নামটি আমার হৃদয় খচিত, আমি থাকতে চায় তোমার ছায়া হয়ে। আমি ইহলীলা আস্বাদনের দ্বার প্রান্ত থেকে ফিরে এসে এই তোমার তরে হাত প্রসারিত করেছি, তুমি কি এতটুকু ভালোবাসায় আমায় প্রশান্ত করবে না?’ কিন্তু নির্বিকার এই মানবির বন্ধুত্বপূর্ণ মনটা যদি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়, আথবা সে যদি তাকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে কহন কেমনে তার সাগরসম জীবনে এলিসাহীন বৈঠা বায়বে!? তাই সে নিশ্চুপ থাকে। অপর প্রান্তে এলিসার জল্পনারও শেষ নেই, ‘কেন তুমি মনের জমে থাকা কথাগুলো অবলীলায় বলতে পারছনা? আমি এই তো তোমার সামনে, তবুও কেন এত দ্বিধা পোষে আছ? তোমার ঐন্দ্রজালিক চোখগুলো যে আমায় আর স্থির থাকতে দিচ্ছে না। কত কষ্টই না তুমি পাচ্ছ। আমি কেমনে বুঝাব আমিও যে আজ তোমার ভাসানো নায়ে একসাথে পাল তুলব বলে পা বাড়িয়েছি, হোক তা একটা মুহূর্তের জন্য। এই মন একটু সান্ত্বনা তো অন্তত পাবে।‘ এসব ভাবতে ভাবতে এলিসার চোখগুলো বড্ড টলমল।
পরক্ষনেই এলিসা উঠে দাড়ায়, বেলা যে অনেক গড়িয়েছে। সে কহনের হাত ধরে বাইরের এক রেস্তোরায় চলে আসে। হাত ধরতেই কহনের অন্দরটা কেমন কেঁদে উঠল, চোখও অনেক জল বিসর্জন দিল এই লগ্নে, কিন্তু এলিসার গোচর হওয়ার আগেই কহন তা দুর্বোধ্য করে। এই রেস্তোরায় তারা লাঞ্চ করে। এরই মাঝে এলিসা তার হৃদয়ে জামে থাকা সেগুন পত্রের আড়াল থেকে দংশনরত কথাগুলো কয়েক বার বলার চেষ্টা করেও থমকে গেছে, সে এক অসীম মায়া কহনের প্রতি তার। কহন যদি এখন তাকে বলে আগ্নেয়গিরির ওই যে উপরে ভাসমান, আশু বিলিয়মান মেঘখণ্ডটির উপরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগে কিছুটা প্রেমঘন মুহূর্ত যাপন করতে, সে নির্দ্বিধায় কহনের প্রেমলুলোপ হাতটি ধরে ওই অগ্নি আসনে বসতেও রাজি। কারণ যে সে বড়ই কাঙ্গাল ঘণ্টাই ৫৯ মিনিট তার বাসনায় নিমগ্ন থকা ওই নির্বোধ ছেলেটির জন্য। কিন্তু এই বিরহিনীর আরাধনায় নিজেকে জড়িয়ে অবিরাম কাতরাতে থাকা ছেলেটিকে ক্ষণিক উল্লাসের পললে ভাসিয়ে আজীবন অঙ্গার এক মূর্তিকে দেখতে চায় না সে। সে চায় এই অমলিন হাসিটি কহনের মুখে শেষ নিঃশেষ পর্যন্ত অটুট থাকুক। ওপার থেকে সে এটা দেখেই নিজেকে চরিতার্থ মনে করবে। বুক যে তার ফেটে যায়, কিন্তু চোখ তার এতটুকু চিহ্নও রাখে না। এমনই প্রস্তরের চেয়েও দৃঢ় কঠিন পদার্থটি তার সিদ্ধান্ত জানায়, ‘কহন! কিছুদিন আগে আমার একজনের সাথে কথা হয়। বাবা-মা’র সম্মতিতে আমি ওকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। আমার বন্ধু বলতেই তুমি, নিশ্চিত জানি পরবর্তী কোন মধুময় স্মৃতি আমার এই ২বছরের ২মিনিটের স্মৃতিকেও ম্লান করতে পারবে না। তোমার বন্ধুত্বে আমি এতটাই ডুবেছি যে আমি ভুলেই গিয়েছি মানসিকতার দিক থেকে আমরা ২টি আলাদা বৈশিষ্টের, আলাদা জগতের দুজন মানুষ। এরপর হয়ত তোমার সাথে আমার আর কক্ষনো বের হওয়াটা হয়ে উঠবে না, তুমি আমার আপরাধ নিও না, কিন্তু এটা মনে করিও না যে আমাদের বন্ধুত্বের ইতি টানছি; তোমার-আমার বন্ধুত্ব অনন্ত কলের। তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিও না, ভুলে যেও না। অনেক ভাল থাকবা।‘ এই কথাগুলো বলে এলিসা বাইরে এসে থামে। এলিসার এই গরগর বলার মাঝে কহন যেন জমে শিলায় পরিণত। আর সেই পাথর ঘেসেই ঝর্ণাধারা অবিরত। ভোরের অচৈতন্য পদার্থটি আরও একবার অচেতন, কিন্তু মাত্রাটা ভিন্ন- ভোরেরটা ছিল পুলকের, এবারেরটা বিষাদের। তার আন্দোলিত কথাগুলো অঙ্কুরেই স্তমিত। কেমনে সে এই বিরহ হজম করবে, কেমনেই বা সে এলিসাকে হারানোর বেদনা তার আবেগি মানটাকে বুঝাবে? এখন কহনকে সামনে বসা রিক্সাওয়ালাটির চেয়েও কিঞ্চিৎ অসহায় মনে হচ্ছে। চেরাগি পাহাড়ের দিকে রিক্সা চলছে। কহন-এলিসার মুখে আর কোন কথাই সরে না; রিক্সাভর্তি যেন শুনশান নিস্তব্ধতা।
বিকেল আল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই গোধূলিতে বিলাবে। নিষ্প্রভ কহন বিকেলের রোদে নিজের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার মুখখানি অবলোকন করছে একটা সেকেন্ডও নষ্ট না করে। তার ভালোলাগার সবকটি উপাদান দিয়ে এলিসা আজ সজ্জিত, লাল পল্লবের মাঝে এ যে এক শ্বেত অর্কিড। তার মনটা অনেক করে চাচ্ছে এলিসাকে একটা মুহূর্তের জন্য হলেও ভীষণভাবে ভালোবাসতে , আলতোভাবে তার মুখশ্রীটা ছুঁয়ে দেখতে, মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে বলতে তার ইচ্ছে করছে, ‘আমার চলার অন্ধকার পথটিতে একটা ক্ষীণ প্রদীপ দরকার যার উপর ভর করে আমি অন্তত বেঁচে থাকব, তোমার হৃদয় প্লাবিত একরাশ ভালোবাসা কি তুমি আমায় দেবে? যা আমি ওই প্রদীপ হিসেবে জনম জনম ধরে তোমারই স্মরণে জ্বালিয়ে রখব, তোমাকে আমার মাঝে জিইয়ে রাখব। বসন্ত, বল দেবে আমায়?’ কহনের চোখ এখন বড়ই ভেজা। এলিসা তার দিকে তাকানোর শক্তিটা এক প্রকার হারিয়েই বসেছে। চেরাগি পাহাড়ের একটু আগেই কহন রিক্সা বিদায় করে। দুজন চেরাগি পাহাড়ের দিকে আগ্রসর হয়।
ফুলের দোকান থেকে আবেগি পুরুষ একঝাড় গোলাপ নিয়ে এলিসাকে দেয়। এলিসাও তা পরম মায়ায় গ্রহণ করে। উভয়ে জামাল খানের দিকে হাঁটে। গোধূলিতে পশ্চিমাকাশ ছেয়ে গেছে। এলিসা যেন এক্ষুনি ঘরের তরে ছুটবে। তা ঠাউর করতে পেরে কহন এলিসার সম্মুখে যেয়ে দাঁড়ায়, এবং তার চোখে চোখ মিলিয়ে মুখের উপর আলতো হাত রেখে দার্শনিক তার দর্শনের ইতি টানে, ‘তুমি মোর জীবনে এসেছ ঊষার সৌরভের সবটুকু আবেদন নিয়ে। চেয়ে দেখ আজ তাই তোমারামার বিদায় বেলায় গোধূলি অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশিই লাল হয়েছে। কারণ আমার অন্তরে অব্যক্ত দ্বন্দ্বের যে খেলা চলছে, তা গোধূলির হয়ত সহ্য হচ্ছে না। না হলে আজকের গোধূলি কেন এমন অরুণ দেখাবে, বল?-জানি না, বুঝি না আমি কেন কাজলাবৃত সেই চোখগুলো প্রতিনিয়ত আমার হৃদয়ের ঐ সুপ্ত সন্ন্যাসীটিকে বিষধর সাপ হয়ে ছোবল মারছে? যার বিষ আমার এই হৃদসিন্ধুকে করেছে সংক্রমিত। যে ছোবল তোমার প্রতি আমকে করেছে অভিরত। আজ তাই আসক্ত এই মনমাঝি তীর্থ চাতকের বেশে পাল তুলেছে তোমার তরে। বসন্ত, যদি তুমি গোধূলির ঐ লাল বুঝতে পার, যদি আমার রক্তিম চোখের এক এক-ফোঁটা জল তোমার প্রেমসিন্ধুর প্রতিটি এলোমেলো জোয়ারকে ত্বরান্বিত করে, তবে আমার ভালোবাসার এই সুদূর প্রসারিত রাস্তায় তোমার সোনালী পায়েলাবদ্ধ চরণের একটি কদম দাও। লক্ষ প্রদীপে সজ্জিত এই তৃষ্ণার্থ পথ তোমারই পদচারণায় মুখরিত হোক। ভালোবাসার এই অন্তহীন পথে হোক তোমারামার এক জনম অভিসার।‘ এই বলে সে অঝোরে কাঁদে। এখন আর কোন বাঁধাই তার কান্নাকে থামাতে পারবে না; পিট তার দেয়ালে ঠকেছে যে। এলিসা কহনের গালে তার কোমল হাতটি রাখে, ‘নিজের প্রতি খেয়াল রেখো। একফালি হাসি দিয়ে চারপাশ মাতিয়ে রেখো। আমি আড়াল থেকে না হয় তোমার সেই হাসিটির অপেক্ষায় থাকব।‘ এর বেশি কিছুই এলিসা বলতে পারে না। চোখের গহ্বর পুরিয়ে পানিগুলো উপচানোর আগেই সে রিক্সায় চড়ে বাসায় ফেরে।
বিছানার শুকিয়ে যাওয়া বালিশটি আবার গোসল করবে বলে অধীর আগ্রহে তার জন্য প্রতিক্ষা করছে। এলিসা কহনকে নিরাশ করলেও বালিশটাকে ঠিকই পূর্ণস্নাত করেছে। সে চায়লে কহনের গলায় গলা মিলিয়ে কন্নার স্বরটি দিগন্তে পৌঁছানো সাক্ষী হতে পারত। বলতে পারত সে কহনকে ততটাই ভালবাসে যতটা কহন তাকে। কিন্তু সে তা করেনি কারণ তার অন্তরের পাথরগুলো পরস্পরের ঘর্ষণে জ্বলতে জ্বলতে অসীম ক্ষমতা লাভ করেছে। তাই সে চায়লেই যেকোনো সময় তার অন্তরের বিরোধিতা করতে পারে।
সেই রাতেই এলিসা কহনকে চিঠি লিখেঃ
‘বসন্ত! জানি আমার প্রতি তোমার অনেক রাগ, ক্ষোভ, অভিমান। আমাকে অনেক পাষাণ মনে হচ্ছে তোমার কারণ তোমার কোন কিছুরই কোন উত্তর আমি দেইনি। অনেক ইচ্ছা ছিল সব কিছু ভুলে যেয়ে, নিজের নির্মম ভবিষ্যৎ ভুলে যেয়ে তোমাকে একটু ভালোবাসতে, কিন্তু আমি পারিনি কহন; তোমার সাথে প্রণয়লীলায় পাল তুলতে পারিনি। কেমন করে বল? যে নারী অল্প কিছুদিনের তফাতে কাফনের আড়ালের ঐ নিষ্প্রাণ এলিসাকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছে, সে কিভাবে তোমার মত জীব কহনকে আগলাবে? কি করে বলব, ‘কহন আমায় একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধর। আমার অস্তিত্বের পরতে পরতে তুমি নামের এক আশক্ততা আবিরাম শিষ বাজাচ্ছে, আমাই একটু ভালবাস!?‘
জান কহন,(?) যখন আমার রক্তে যমদূতটি ক্যান্সারের চাষ করবে বলে এলিসা নামের দেহটা বর্গা নিয়েছে জেনেছি, যখন জেনেছি যে আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে বেশিদিন আর বাঁচব না, তখন আমার নিজের জন্য অতটা কষ্ট হয়নি, যতটা কষ্ট তোমার জন্য অনুভব করেছি। কারণ তুমি আমার ভালোবাসার কিশলয় ভেদ করে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে ফুটন্ত সে চন্দ্রমল্লিকা যে। আমি জানি তুমি আমায় কতটা ভালবাস। আর এতটা ভালোবাসে তুমি আমাকে হারানোর বেদনা কিভাবে বয়ে বেড়াবে, এটা ভেবেই খুব বেশি কষ্ট পাচ্ছি এবং প্রার্থনা করছি আল্লাহ যাতে তোমাকে মানসিক দৃঢ়তা দান করেন।
তোমাকে বলেছিনা আমার বিয়ে। তা আসলে বিয়ে না কহন- প্রস্থান। লালের পরিবর্তে সাদা শাড়ির পরশে প্রাণহীন ভাগ্যবতী এক নারীর ইন্দ্রিয় হতে অতীন্দ্রিয়ে প্রস্থান। আমি ভাগ্যবতী কারণ তুমি না বলা সত্ত্বেও তোমার ভালোবাসার শিহরণ আমার চুল থেকে পায়ের ডগা পর্যন্ত সাড়া ফেলেছে। তাই আজ লাল শাড়ির আবেশে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির সাথে এই ইহকালে জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন যাপন করেছি এবং আমার চোখ জুড়িয়েছি তোমায় দেখতে দেখতে, কান জুড়িয়েছি তোমার ভালোবাসার দর্শন শুনে। আমার ভালোবাসার বার্তা না হয় তুমি এই চিঠিতেই পেলে। তোমাকে ছাড়া দ্বিতীয় কোন পুরুষের প্রতি ভালোবাসা জন্মানোটা আমার অস্থিত্তের বিরোধী, পাপ আমার জন্য।
চাতক, আমি তোমাকেই ভালবাসেছি, যা তালাবদ্ধ এই মুখ কক্ষনো তোমাকে বলতে পারেনি। আমার এই তৃষিত হৃদয় সারাক্ষণ তোমাকেই চেয়েছে, যে হৃদয় তার চারপাশের প্রস্তরের দেয়ালগুলো ভেদ করে তার অনুভূতিগুলো তোমার সামনে প্রকাশ করতে পারেনি, করেনি। বাবু, আমার আজ অনেক বাঁচতে ইচ্ছে করছে অন্তত তোমার বিবাহিত বউ হিসেবে একটা দিন। কিন্তু এই দিনটা আমি তোমার কাছে কক্ষনো চাইব না, কারণ এই দিনটি হয়ত তোমার জনম জনমের কন্না হতে পারে।
কহন, আজ গোলাপের যে গুচ্ছটি তুমি আমাকে দিয়েছ, এমনই করে প্রতিবছর যখন এই দিনটি আসবে ঠিক তেমনই এক গোলাপগুচ্ছ আমার ঐ মাটির কুঁড়েঘরে পাশে অর্পণ করবে, রাখবে তো বল? সেই দিন কোন এক বাজপাখির বেশে তোমার হাতে হাত রেখে চেরাগি পাহাড়ের ঐ রাস্তাটি ধরে হাঁটবো, অবিরাম হাঁটবো।‘
পরদিনই এলিসার অনুরোধে তার পরিবার অন্যত্র চলে যায় এবং তার যে নম্বারটা কহনের কাছে আছে ওটাও বন্ধ করে দেয়। চিঠিটা সে তার মৃত্যুর পরেই তার বাবাকে কহনের ঠিকানায় পোস্ট করতে বলে।
কহন ভীষণভাবে পরাভূত, প্রিয়তমার মুখটি মনে পড়লে আরও বেশি পরাভূত। পকেটের রিংটির উপর অত্যাচার সীমা ছাড়িয়েছে। বার বার ফেলে দিতে যেয়েও এলিসার মায়ায় সেটা বুকে আগলে রাখে। বাসায় এসে রাগে ক্ষোভে আর ফোন ধরে না। তিনটা ঘুমের ওষুধ তার পেট পূজা করছে, ফলে বিছানায় পড়তেই পারদিন বেলা ৩টা দেখে। ঘুম থেকে উঠতেই পূর্বের দিনের বিরহটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তার সকল উদ্দীপনার মূলমন্ত্র যে এলিসা, ভোরে যার কলে তার ঘুম ভাঙ্গে তা এলিসা; সে তার লয়ের কুকিল। কিন্তু আজ তার ফোনে সকাল ৬টার কোন কল নেই, নেই কোন এস এম এসের আনাগোনা। অসম্ভব! এ হতে পারে না, মেঘলা আকাশে মাঝে মাঝে প্রভাতের সূর্য কিরণ অগোচর হতে পারে, কিন্তু কালকের মেঘলা মেয়েটির এরূপ মেঘাচ্ছন্নতা সত্যিই দুর্বোধ্য। এই কহন আর স্থিরতায় নেই; কল করে, কিন্তু ফোন বন্ধ। আবার করে...আবার করে, এভাবে ২০বারের উপরে এলিসাকে ফোন করে, সিম যে নির্বাক। আর মন মানে না, সে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এলিসার বাসায়, কিন্তু কেউ নেই বাসায়। কেউ জানে না তারা কোথায়। দরজা যেন সে এখনই ভেঙ্গে ফেলবে। ‘এলিসা...এলিসা...এলিসা’ এমনভাবে সে চিৎকার করে, যদি এলিসা পাশে কোথাও থাকত তাহলে সে নিশ্চিত এসে এই উন্মাদের উন্মত্ততা প্রশমনে বাধ্য হত। বিরহিণী যে কহনের মুখের বুলি, সে তো কহনেরই নিত্য দিনের স্তুতি।
প্রতিদিনই সে এলিসার দ্বারে এসে কড়া নাড়ে। প্রত্যেকটা দিনের প্রত্যেকটা সেকেন্ড যেন তার মাথার মগজটাকে থেঁতলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কয়েকটি রাতও সে এখানেই কাটিয়ে দেয়। কিন্তু এলিসা আসে না। এভাবে পুরা একটা মাস অতিবাহিত হয়। পরদিন সকালে নিত্যদিনের মত সে এলিসার বাসায় আসবে, এমনই সময় ডাকবাক্সে সে চিঠিটা পায়। তার মানে এলিসা আর নেই। মায়ার এই পৃথিবী ছেড়ে, প্রাণের চেয়েও প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে সে চলে গেছে নিজেকে সব পূর্ণতার মাঝেও বঞ্চিত রেখেই, মায়ার এই দুনিয়ায়ার নির্মম বিষাদে কহনকে রেখেই। বড়ই জটিল এ মায়া, কারো জন্য মধুর, কারো জন্য মধুর হয়েও বন্ধুর।
কহন আরও একবার ঐ লাল পাঞ্জাবীটিতে প্রবেশ করে,অত্যাচারিত রিংটি সাথে নিয়ে যাত্রা করে কণ্ডিফর্ম ম্যাপের সমাধিস্থ অর্ধেকটার পানে। সেদিন প্রভাতে যে কম্পনটা তার শরীরে বিরাজমান ছিল, আজ সেটা নেই; কম্পনরাণীই যে নেই। আজ বড় পোক্ত সে, অবেক্ত বচনের কোন দ্বন্দ্ব নেই; ব্যক্ত যে তার প্রিয়তমার বিরামহীন নিদ্রা। কেন এলিসা তাকে সাথে করে নিয়ে যায়নি? তার কষ্টে শীতের শুকিয়ে যাওয়া পাতাটিও যে শিউরে উঠছে।
সে এলিসার কথা রাখে, খুব ভাল করেই রাখে। সে গোলাপের ডালা বিছিয়ে দিয়েছে এলিসার সমাধির চারপাশের বৃহৎ এলাকা জুড়ে; এ যে গোলাপের মাঝেই যেন গোলাপ শয্যাশায়ী। এখানেই সে বসত গেড়েছে, গোলাপের দোকান খুলেছে। অত্যাচারিত রিংটিকে এখন সে কাচের কলসে খুব যত্ন করেই রেখেছে কারণ এটাকেই সে এলিসার রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতি মনে করে। সে এখন জনে জনে গোলাপ বিলায়। কেও জানে না এই গোলাপের নিগুঢ় রহস্য; শুধু জানে তার এই সংক্রমিত মন, মৃতের সাথে যার অবিরাম আলাপন।

No comments

“The Ancient Mariner” is a simple allegory of guilt and regeneration.

Topic: The Ancient Mariner Author: Samuel Taylor Coleridge Type of Work: Poem Discussion Category: Broad Question In this segment,...

Powered by Blogger.